উমরাহ হলো ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা যেকোনো সময় বছরে (শুধু হজ্বের দিনগুলো ছাড়া) পালন করা যায়। এটি হজ্বের মতো ফরজ নয়, তবে সুন্নত ও নফল ইবাদত হিসেবে গণ্য। ব্যক্তিগতভাবে উমরাহ করতে চাইলে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
প্রস্তুতি পর্ব
১. নিয়্যত ও ইলম অর্জন:
উমরাহর নিয়্যত করুন এবং এর নিয়ম-কানুন শিখুন (ভিডিও টিউটোরিয়াল, বই বা আলেমের পরামর্শ নিন)।
দোয়া ও ইস্তেগফার: রুহানি প্রস্তুতির জন্য বেশি বেশি দোয়া ও তাওবা করুন।
২. ভিসা ও ট্রাভেল অ্যারেঞ্জমেন্ট:
সৌদি ভিসার জন্য অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করতে হবে ব্যক্তিগতভাবে আবেদন করা যায় না। এক্ষেত্রে ভিসার খরচ ১৮৭০০-২৪,৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বিস্তারিত জানতে কল করতে পারেন: 01977610674
ফ্লাইট বুকিং করুন: যে কোন বিমানের আপনার বাজেট অনুযায়ী টিকেট বুকিং করুন। এটা আপনি চাইলে একা একাই করতে পারেন বা যে কোন এজেন্সির সাহায্য নিতে পারেন। অথবা কল করুন: 01977610675
৩. হোটেল বুকিং:
মক্কার মসজিদুল হারামের কাছাকাছি হোটেল বুক করুন। আপনি অনলাইনে বুকিং.কমেও হোটেল পেয়ে যাবেন। যদিও অনলাইনে বুকিং এর খরচ তুলনামুলক বেশি হয়ে থাকে আপনি চাইলে এজেন্সির মাধ্যমে হোটেল বুকিং দিতে পারেন। 150-200 রিয়ালের মধ্যে মাঝারি মানের হোটেল পাওয়া যায়। (যেমন: মদিনা থেকে মক্কা বুলেট ট্রেনে ২ ঘন্টায় যাওয়া যায়)।
৪. জরুরি জিনিসপত্র:
পাসপোর্ট, ভিসা, ইহরামের কাপড় (২ সেট সাদা কাপড়), উমরাহর সময় পরিধানের জন্য ২ ফিতা জুতা এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় পোশাক ও অন্যান্য জিনিসপত্র।
উমরাহর ধাপগুলো
১. ইহরাম বাঁধা
মিকাত থেকে ইহরাম: বাংলাদেশ থেকে গেলে সাধারণত ফ্লাইটে ইহরামের নিয়্যত করতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনি ডিরেক্ট ফ্লাইটে গেলে এয়ারপোর্ট ঢোকার পর বা ঢাকার ভিতরে বাসা হলে বাসা থেকেই ইহরাম পড়ে নিয়ত করে রওনা দিতে পারেন। যদি ট্রানজিট ফ্লাইটে যাতায়াত করেন সেক্ষেত্রে যে দেশে ট্রানজিট দিবে সেখানে গিয়ে ইহরাম পরে নিতে পারেন।
গোসল করুন ও সুন্নত নামাজ পড়ুন।
ইহরামের কাপড় পরুন: পুরুষরা ২ টি সাদা চাদর (নিচের অংশ লঙ্গীর মত, উপরের অংশ চাদরের মত), মহিলারা সাধারণ পোশাক (বোরকা পরিহিত থাকলে ভালো হয়)।
ইহরাম অবস্থায় যেসব কাজ নিষিদ্ধ:
*পুরুষের জন্য কোন ধরণের সেলাইযুক্ত কাপড় পরিধান করা।
* খোশবু বা সুগন্ধি ব্যবহার করা।
* সুগন্ধিযুক্ত তেল বা সাবান ব্যবহার করা।
* মাথা ও মুখমন্ডল আবৃত করা।
* পায়ের পাতার উপরের হাড় জুতা বা মোজা দ্বারা আবৃত করা।
* চুল, দাড়ি, গোঁফ ইত্যাদি কাটা বা ছিড়ে ফেলা, নখ কাটা বা ছেড়া।
* স্বামী-স্ত্রীর দৈহিক মিলন।
* যৌন উত্তেজনামূলক কোন কথাবার্তা বলা।
* ঝগড়া-বিবাদ করা বা অশ্লীল কথাবার্তা বলা।
* পশু-পাখি তথা কোন স্থলজ প্রাণী শিকার করা বা শিকারে সহযোগিতা করা।
* শরীরের উকুন মারা বা অপসারণ করা।
* সুগন্ধি ফুলের মালা ব্যবহার করা।
* মহিলাদের মাথা খোলা রাখা।
* স্ত্রীকে চুমু দেওয়া বা কামভাব নিয়ে স্পর্শ করা।
* হারাম এলাকার পশু পাখি শিকার করা বা তাদের কষ্ট দেয়া।
* হারাম এলাকার গাছপালা বা ঘাঁস কাটা। শেষ দুটি কাজ হালাল তথা ইহরাম ছাড়া অবস্থায়ও জায়েয নেই।
নিয়্যত করুন: “লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা উমরাতান” (হে আল্লাহ! আমি উমরাহর জন্য হাজির)।
তালবিয়া পড়া শুরু করুন:
لَبَّيْكَ اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ – لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ – إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ – لَا شَرِيكَ لَكَ
“লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক…”
২. মক্কায় পৌঁছে তাওয়াফ
মসজিদুল হারামে প্রবেশ করে হাতেমে কাবা (কাবার চারপাশ) তাওয়াফ করুন:
৭ চক্কর: কাবার বাম দিকে ঘুরে, হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) থেকে শুরু করুন (চুমু দেওয়া বা ইশারা করা)।
দোয়া: প্রতিটি চক্করে দোয়া ও জিকির করুন (সূরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসি ইত্যাদি)।
তাওয়াফ শেষে মাকামে ইব্রাহিমে ২ রাকাত নামাজ পড়ুন।
৩. সাঈ (সাফা-মারওয়া দৌড়ানো)
সাফা পাহাড়ে উঠে নিয়্যত করুন এবং মারওয়া পাহাড় পর্যন্ত ৭ বার দৌড়ান/হাঁটুন:
পুরুষরা সবুজ লাইটের জায়গায় দ্রুত হাঁটবেন, মহিলারা স্বাভাবিক গতিতে।
প্রতিটি ট্রিপে দোয়া ও জিকির করুন।
৪. চুল কাটা (হালক বা তাকসির)
সাঈ শেষে পুরুষরা মাথা ন্যাড়া করুন (হালক) বা চুল ছোট করুন (তাকসির)। মহিলারা আঙ্গুলের এক গাঁট পরিমাণ চুল কাটুন।
এর মাধ্যমে ইহরামের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়।
গুরুত্বপূর্ণ টিপস
ইহরামের নিষেধাবলি: ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধি, নখ কাটা, বিবাহ বা লজ্জাস্থান ঢাকা ছাড়া চুল/নখ কাটা নিষেধ।
সময় ব্যবস্থাপনা: ভিড় এড়াতে রাত বা ফজরের সময় তাওয়াফ-সাঈ করুন।
জিয়ারত: মদিনায় মসজিদে নববীতে সালাম পেশ করুন (উমরাহর অংশ নয়, তবে সুন্নত)।
ভুলগুলো এড়িয়ে চলুন
❌ মিকাত পার হয়ে ইহরাম বাঁধা ভুললে দম (কুরবানি) দিতে হবে।
❌ তাওয়াফে কাবার ভেতরে প্রবেশ করা নিষেধ।
❌ মহিলাদের জন্য একা উমরাহ না করা উত্তম (মহরাম সঙ্গী প্রয়োজন)।
উমরাহর ফজিলত
রাসুল (সা.) বলেছেন, “উমরাহ পরবর্তী উমরাহর মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মিটিয়ে দেয়।” (বুখারী, মুসলিম)।
মক্কা-মদিনার জিয়ারত করলে জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া যায়।